বর্তমান বাংলাদেশে অনলাইনে কাজ করে মানে ফ্রিল্যান্সিং করে ক্যারিযার ডেভেলপমেন্ট করা একটি ট্রেন্ডিং বিষয়। অনলাইন থেকে আপনি বিভিন্ন কাজ করে টাকা ইনকাম করতে পারেন। তবে বেশিরভাগ কাজ করে ইনকাম করতে চাইলে আপনার আগে ভালোভাবে কাজটি শিখতে হবে , তারপর ইনকাম করতে পারবেন। বেশিরভাগ কাজ শিখতে সাধারণ মানুষের ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সবার পক্ষে এত সময় কাজ শেখার পিছনে দেয়া সম্ভব না। কিন্তু ডাটা এন্ট্রি এমন একটি কাজ যেটি আপনি খুবই কম সময় দিয়ে শিখে মোটামুটি ইনকাম করতে পারবেন। আপনি যদি ডাটা এন্ট্রি শেখার জন্য ১ থেকে ৩ মাস সময় ব্যায় করতে পারেন তাহলে আপনি অনলাইন বা অফলাইনে বাংলাদেশের মার্কেটে ডাটা এন্ট্রি জব করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইন থেকে টাকা ইনকামের যতগুলা উপায় আছে তার মধ্য সবচেয়ে সহজ কাজ হলো ডাটা এন্ট্রি। ডাটা এন্ট্রি করা করা সহজ বলে এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। কম্পিউটার সম্পর্কে সামান্য ধারণা থাকলেই আপনিও ডাটা এন্ট্রি শিখে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে অনলাইন বা অফলাইনে ডাটা এন্ট্রি জব শুরু করতে পারবেন। টাইপিং , কপি,পেস্ট,ফরম পূরণ, ক্যাপচা দেখে লিখা, পিডিএফ থেকে টেক্সট ফরমেটে কনভার্ট করা ,অনলাইন থেকে ডাটা সংগ্রহ, এগুলোই মূলত ডাটা এন্ট্রি কাজ। আশা করি ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন।
ডাটা এন্ট্রি কি?(Data Entry ki ?)
ডাটা এন্ট্রির সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা পড়ে আপনি ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে কিছুই বুজতে পারবেন না। ডাটা এন্ট্রি কি সেটা জানার আগে জানতে হবে ডাটা কি। ডেটা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো উপাত্ত। যেকোনো তথ্যের অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্রতর এক বা একাধিক ক্ষুদ্রতর অংশসমূহ হলো ডাটা বা উপাত্ত। সহজ বাংলা ভাষায় ডাটা বা ডেটা হলো কোন ফাইল, সেটা হতে পারে কোনো টেক্সট ফাইল , হতে পারে কোনো অডিও, ভিডিও, ডকুমেন্ট , ইমেজ ইত্যাদি। ডাটা এন্ট্রি মূলত এসব ডাটা নিয়ে খেলা। এসব ডাটা গুলোকে বিভিন্ন স্থানে যথাযথা ভাবে সংগ্রহ করা, এক ফরমেট থেকে অন্য ফরম্যাটে রূপান্তর করা , ইমেজ থেকে টেক্সট ফরম্যাটে রূপান্তর করা , টাইপিং করা , এগুলাই মূলত ডাটা এন্ট্রি কাজ।
এইরকম অনেক সহজ সহজ কাজ হলো ডাটা এন্ট্রি। ডাটা এন্ট্রি সম্পর্কে আমাদের অনেকের ভুল ধারণা আছে। আমরা অনেকেই মনে করি , কোনো একটি ছবি বা ডকুমেন্ট দেখে দেখে টাইপিং করা ডাটা এন্ট্রি। আবার অনেকেই মনে করে শুধুমাত্র কোনো ক্যাপচা পূরণ করা কাজ হলো ডাটা এন্ট্রি। আসলে প্রত্যেক কোম্পানি বা ব্যাক্তির কিছু কাজ থাকে যেগুলা ডিজিটাল ভাবে সুনিদিষ্ট ভাবে কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে রাখা দরকার হয়। সেটা যেকোনো ধরণের কাজ হতে পারে।
আসলে আপনার এসব বিষয় না জানলেও চলবে। ডাটা এন্ট্রি জব অনলাইন বা অফলাইনে করার জন্য আপনার যা যা শেখা লাগবে , কিভাবে ডাটা এন্ট্রি শিখবেন , কোথায় ডাটা এন্ট্রি কাজ পাবেন , ডাটা এন্ট্রি শিখতে কত সময় লাগবে, ডাটা এন্ট্রি শিখে কত টাকা ইনকাম করা যাই , এসব বিষয়ে এখন বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ডাটা এন্ট্রির প্রকারভেদ
আসলে ডাটা এন্ট্রির কোনো সুনিদিষ্ট প্রকারভেদ নেই। তবে আমি ডাটা এন্ট্রির এমন কিছু প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করবো , যেগুলা জানলে আপনি সহজে অনলাইন বা অফলাইনে কাজ করে ইনকাম করতে পারবেন। কিছু কিছু কাজ রয়েছে যেগুলা প্রায় সব কোম্পানির করা লাগে। আবার অনেক মানুষ আছে যারা ব্যাক্তিগত ভাবে অনলাইন বা অফলাইনে ব্যবসা করে থাকে। তাদের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব হয় না। তাই তারা অন্য কাউকে হাইয়ার করে তাদের কিছু কাজ করতে দেয়।
ডাটা এন্ট্রি কাজের ধরণ –
- MS-excel ডাটা এন্ট্রি
- ট্রান্সলেশন
- আর্টিকেল রাইটিং
- ডাটা কালেকটিং
- পেপার ডকুমেন্টেশন
- স্পেলিং চেকিং
- জব পোস্টিং
- ইমেইল ফাইন্ডিং
- ওয়েব রিসার্চ
- টাইপিং
- প্রোডাক্ট লিস্টিং
ডাটা এন্ট্রি চাকরির ধরন
আপনি সাধারণত ডাটা এন্ট্রি শিখে ২ ভাবে উপার্জন করতে পারবেন
- লোকাল ডাটা এন্ট্রি জব
- ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জব
১) লোকাল ডাটা এন্ট্রি জব
আপনি ডাটা এন্ট্রি কাজ শিখে বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে চাকরি করতে পারেন। এদেশের বিভিন্ন কোম্পানি ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। এসব কোম্পানি সাধারণত ঘন্টা হিসেবে বা ফুল টাইম জব হিসেবে বেতন নিধারণ করে থাকে। বেতন ছাড়াও বিভিন্ন অকেশনে বোনাস দেয়। তাছাড়া সাপ্তহিক বা মাসিক ছুটি, স্বাস্থ্য সুবিধাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। আপনার যদি ইংলিশ এ কমুনিকেশন করার দক্ষতা কম থাকে তাহলে আপনি লোকাল বিভিন্ন কোম্পানিতে Data এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে জবের জন্য আবেদন করতে পারেন। আপনার যদি কাজের ভালো দক্ষতা থাকে তাহলে যেকোনো একটি কোম্পানিতে জব পেয়ে যাবেন।
২) ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জব
বিভিন্ন অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে ডাটা এন্ট্রি এক্সপার্টদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আপনি ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সার বা রিমোট ওয়ার্কার হিসেবে ডাটা এন্ট্রি জব করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার ইচ্ছেমতো যেকোনো সময়ে যাক করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জব করলে আপনি সাধারণত প্রজেক্ট অনুযায়ী বা ঘন্টা হিসেবে পেমেন্ট পাবেন। ডাটা এন্ট্রি শিখলে আপনি পড়ালেখা বা জবের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে ইনকাম করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সবচেয়ে ভালো মার্কেটপ্লেসে হলো – Fiverr, upwork, freelancer.com, Guru ইত্যাদি।
ডাটা এন্ট্রি জব -এ স্যালারি
ডাটা এন্ট্রি কাজের বেতন আসলে বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। কাজের ধরণ ,মার্কেটপ্লেস,ও কাজের ভিন্নতার ভিত্তিতে বেতন বা পেমেন্ট এর পরিমাণ আলাদা হয়ে থাকে। সাধারণত একজন এক্সপার্ট ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের বেতন প্রতি ঘন্টায় ১১ ডলার থেকে ১৭ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর কম বেশিও হতে পারে।
ডাটা এন্ট্রি জবের জন্য যা যা জানা প্রয়োজন
আপনি যদি ডাটা এন্টি অপারেটর হিসেবে সিরিয়াসলি কাজ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশৈই ভালোমতো এক্সপার্ট হয়ে মার্কেটপ্লেসে নামতে হবে , না হলে আপনি প্রতিযোগিতায় হেরে যাবেন। কারণ বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং জাগতে প্রচুর কম্পিটিশন। যদিও ডাটা এন্ট্রি কাজ তুলনামূলক ভাবে অনেক সহজ তারপরও যাদের স্কিল বা দক্ষতা কম তারা ভালো কিছু করতে পারবে না। কম্পিউটারের বেসিক সম্পর্কে অবশৈই আপনার ভালোমতো দক্ষতা অর্জন করতে হবে। অল্প সময়ে অনেক বেশি কাজ করার জন্য আপনার টাইপিং এর ব্যাপারে অবশ্যৈই ভালোমত এক্সপার্ট হতে হবে। প্রতি মিনিটে ৫০ থেকে ৮০টা শব্দ টাইপ করার দক্ষতা থাকতে হবে। ইংরেজিতে অবশৈই কমিউনিকেশন করার মতো দক্ষতা থাকতে হবে। কারণ অনলাইনে কাজ পাবার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্টদের সাথে কমিউনিকেশন করা লাগবে। তবে ভয় পাবেন ,তাদের সাথে সরাসরি কলে কথা বলা লাগবে না। সাধারণত ৯০% কাজ মেসেজিং করে পাওয়া যাই।
কিভাবে দ্রুত ডাটা এন্ট্রি কাজ পাওয়া যাবে
যারা অনেকদিন ধরে কাজ করছে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে কাজ পাওয়া নতুনদের জন্য অনেক কঠিন। তবে আপনি যে মোটেও কাজ পাবেন না এমনটা না। কারণ এই সেক্টরে অনেক কাজ রয়েছে। আপনি যদি আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা দিয়ে ক্লায়েন্ট বা বায়ার কে বোঝাতে পারেন যে কাজটি করার জন্য আপনি পারফেক্ট , তাহলে নতুন হিসেবেও আপনার কাজ পাবার সম্ভবনা অনেক বেড়ে যাবে। এজন্য আপনার সুন্দর একটি প্রোটফোলিও রেডি করতে হবে। আপনি যে মার্কেটপ্লেস কাজ করতে ইচ্ছুক সে মার্কেটপ্লেস আপনি সুন্দর পরিপাটি একটি প্রোফাইল তৈরী করবেন। অবশৈই প্রফেশনাল ইমেজ ব্যবহার করবেন। আপনার যদি পরিপাটি একটি প্রোটফোলিও থাকে তাহলে আপনি মার্কেটপ্লেসের বাইরেও ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করে কাজ করতে পারবেন। তার জন্য আপনার বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রফেশনাল একাউন্ট করুন। আপনার প্রোফাইল আপনি যে যে কাজ পারেন সেসব কাজ উল্লেখ করুন। তারপর বাইরের দেশের বিভিন্ন মানুষের সাথে কানেক্ট হওয়ার চেষ্টা করুন।
Data Entry কাজের কি চাহিদা আছে?
যদিও বর্তমানে বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার দিয়ে ডাটা এন্ট্রির কাজ করা যাই। এজন্য অনেকেই বলে ডাটা এন্ট্রি শিখে কোনো ভাত নাই। কথাটা পুরোপুরি সত্যি না। আপনি ভেবে দেখুন চাকা আবিষ্কারে পরেও কিন্তু মানুষের পায়ে হাটা বন্ধ হয়ে যাই নাই। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার কখনো মানুষের মতো একুরেট কাজ করতে পারে না। বরং যারা এসব সফটওয়্যার এর কাজ ভালোভাবে শিখবে তাদের আরো বেশি কাজের সেক্টর তৈরি হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার আসার কারণে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে। সুতরাং Data Entry কাজের কি চাহিদা থাকবে না এসব চিন্তা বাদ দিয়ে ভালোভাবে কাজ শিখুন। ভালো কাজ পারলে কাজের অভাব হবে না। আধুনিক যুগে সব কাজ অনলিনভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। মানুষের অনেক ডাটা ম্যানেজমেন্ট করায় প্রয়োজন হচ্ছে। একারণে বিভিন্ন কোম্পানিগুলা ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে ছোট বড়ো ডাটা এন্ট্রি রিলেটেড কাজ করতে চাচ্ছে। তাই ডাটা এন্ট্রি কাজের চাহিদা আরো ভবিষতে দ্রুত বাড়তে থাকতে থাকবে।
কেন ডাটা এন্ট্রির কাজ শিখবেন?
সহজে চাকরির সুবিধা
আধুনিক বিশ্বে এমন কোনো সকারী বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যাবে না যাদের ডাটা এন্ট্রি রিলেটেড কাজের প্রয়জোন নাই। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে আইটি সেক্টর, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যখাত সেক্টরেও বর্তমানে অনেক ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের কর্মের সুযোক রয়েছে। আপনার যদি এই কাজের ভালো দক্ষতা থাকে তাহলে সহজেই আপনার কর্মের ব্যবস্থা করতে পারবেন। তাছাড়া অনলাইন এ আপনার ফ্রীল্যান্সার হিসেবে কাজ করার হাজার হাজার পথ খোলা রয়েছে।
বিশেষ কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন নেই
ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করার জন্য আপনার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার দরকার নাই বা কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়ালেখার দরকার হয় না। আপনার যদি বেসিক কম্পিউটার চালানোর দক্ষতা থাকে এবং মোটামুটি ইংলিশ জানেন তাহলে খুব সহজে এই কাজ শুরু করতে পারবেন।
স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ
ডাটা এন্ট্রি স্কিল আয়ত্ত করে আপনি যেকোনো জায়গা থেকে ফ্রীলান্সার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। আপনার ইচ্ছে হলে আপনি কাজ করবেন ইচ্ছে না হলে কাজ করবেন না। কেউ আপনাকে জোর করে কাজ চাপিয়ে দিতে পারবে না। আপনার ইচ্ছে মতো যেকোনো সময়ে কাজ করবেন। আপনার শুয়ে ,বসে ,দাঁড়িয়ে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে কাজ করতে পারবেন।