ই-সিম সাপোর্টেড মোবাইল, ই-সিম ব্যবহারের নিয়ম ও ই সিমের সুবিধা- অসুবিধা 

বর্তমানে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের একটি জনপ্রিয় বিষয় হচ্ছে ই-সিম বা এমবেডেড সিম টেকনোলজি । সাধারণ সিমের পরিবর্তে বর্তমান বিশ্বে ই সিমের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে ই সিম বাংলাদেশ এ গ্রামীণফোন, রবি , বাংলালিংক সহ বেশ কয়েকটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ইতেমধ্যে সার্ভিস দেয়া শুরু করছে। তাছাড়া সকল মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ই -সিম  নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই সিম জনপ্রিয় হবার প্রধান কারণ হলো সিম ইজেক্টর টুল দিয়ে সিম রিমুভ করে নতুন সিম প্রবেশ করানোর কোনো ঝামেলা নাই। একই সঙ্গে একটি মোবাইলে প্যাকেজে ও মোবাইল ভেদে ৫ টি থেকে ২০ টি পর্যন্ত সিম ব্যবহার করা যাবে ই-সিমে সুবিধার কারণে। তবে ইসিমের বড় একটি অসুবিধা হচ্ছে সকল ফোনে ই -সিম সাপোর্ট করে না।  আমরা আজকে জানানোর  চেষ্টা করব কোন কোন ফোনে  ই-সিম  সাপোর্ট করে, বাংলাদেশের  বাজারে ই সিম সমর্থিত স্মার্টফোন কোনগুলো এবং কিভাবে  ই -সিম ব্যবহার করতে হয়।  এছাড়া  আরও জানবো এই সিমের সুবিধা এবং অসুবিধা সমূহ কি কি ?

ই-সিম কী ?

E-sim এর পূর্ণরূপ হলো – Embedded Subscriber Identity module (এমবেডেড সাবস্ক্রাইবার আইডেনটিটি মডিউল)। অনেকেই এটিকে সংক্ষেপে এমবেডেড সিম বলে।  এর কাজ সাধারণ সিম কার্ডের মতো। তবে এটি প্লাস্টিক চিপের কোনো কার্ড নয়। একটি ইলেকট্রনিক চিপ। আপনি চাইলেই এটি খুলে সিম পরিবর্তন করতে পারবেন না। তবে নম্বর পরিবর্তন করতে পারবেন। আধুনিক বিভিন্ন ফোনে চিপ হিসেবে মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত করা থাকে।এটা সম্ভব হয়েছে ন্যানো টেকনোলজির কারণে।  প্রচলিত সিমকার্ডের আপগ্রেড বা আরো উন্নত ভার্সন হলে ই-সিম। সাধারণ সিমের মতো নম্বর পরিবর্তন করার জন্য বার বার সিম ইজেক্টর টুল দিয়ে সিম খুলে আবার অন্য সিম ফোনে ঢুকানোর জামেলে নাই। সাধারণ সিমের মতো এই সিমও সিম অপারেটর কোম্পানির কাছ থেকে রেজিস্টেশন করে নিতে হয়।  একই ফোন এ  একাধিক কোম্পানির একাধিক নম্বর ব্যাবহার করতে পারবেন ই-সিম সুবিধার কারণে। তবে এই সিম ব্যাবহারের জন্য আপনাকে অবশৈই ই সিম সমর্থিত স্মার্টফোন থাকা লাগবে 

বাজারে ই সিম সমর্থিত স্মার্টফোন কোনগুলো-

প্রথমদিকে শুধুমাত্র  Apple (iphone), স্যামসাং এবং গুগল পিক্সেলের নির্ধারিত কিছু সিরিজের ফোনে ই-সিম ব্যাবহারের সুবিধা ছিল। বর্তমানে এগুলা ছাড়াও Huawei, Oppo, Motorola, Sony এবং Xioami ব্রান্ডের বেশ কিছু মডেলের মোবাইলে এই সিম ব্যাবহারের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। 

 

eSIM সমর্থিত হ্যান্ডসেটে গুলোর তালিকা-

iPhone

আপনি একটি আইফোনে আট বা তার বেশি ইসিম ইনস্টল করতে পারবেন  এবং একই সময়ে দুটি ফোন নম্বর ব্যবহার করতে পারবেন। এমন তথ্য দিয়েছে apple কোম্পানি।  আইফোনে এর সবগুলা মডেল বা ভার্সনে ই-সিম সাপোর্ট করে না। যে যে আইফোনে ইসিম সাপোর্ট করে  সেগুলার তালিকা নিচে দেয়া হলো –

iPhone 14

  • iPhone 14 Plus
  • iPhone 14 Pro
  • iPhone 14 Pro Max
  • iPhone 13, 13 Pro, 13 Pro Max, 13 Mini
  • iPhone XR
  • iPhone 12, 12 Pro, 12 Pro Max, 12 Mini
  • iPhone 11, 11 Pro, 11 Pro Max
  • iPhone SE
  • iPhone XS, XS Max

Samsung 

বর্তমান বেশ কিছু Samsung ডিভাইসে ই-সিম সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। Samsung ফোনে একটি বাংলাদেশী ই-সিম নম্বর ইনস্টল করে আপনি ১৯০ টিরও বেশি দেশে ইন্টারনেট  ব্যাবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক অপারেটরের রোমিং চার্জ এর চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক হতে পারে। যেসকল Samsung ফোনে ই-সিম ব্যাবহার করা যাবে যেসকল ফোনের তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলো –

  • Samsung Galaxy S22 5G, Ultra 5G, S22
  • Samsung Fold LTE model
  • Samsung Z Flip 4
  • Samsung Z Fold 4
  • Samsung Galaxy Z Flip 5G
  • Samsung Galaxy Z Fold 3 5G
  • Samsung Galaxy Z Flip
  • Samsung Galaxy Fold
  • Samsung Galaxy S21+ 5G
  • Samsung Galaxy Z Fold2 5G
  • Samsung Galaxy S21 Ultra 5G
  • Samsung Galaxy Note 20 FE 5G
  • Samsung Galaxy Note 20 FE
  • 1Samsung Galaxy Note 20 Ultra, Ultra 5G
  • Samsung Galaxy S23, S23+ and S23 Ultra 
  • Samsung Galaxy S20, S20+ and S20 Ultra

 

Google Pixel 

ফোন মডেল এবং মোবাইল ক্যারিয়ারের উপর নির্ভর করে অনেকগুলা Google Pixel  ফোনে  eSIM ব্যবহার করতে পারেন। আপাতত যেসকল Google Pixel  ফোনে  eSIM  সাপোর্ট করে সেগুলার তালিকাঃ 

  • Google Pixel 7
  • Google Pixel 7 Pro
  • Google Pixel 6 Pro
  • Google Pixel 4
  • Google Pixel 6
  • Google Pixel 5
  • Google Pixel 5a 5G
  • Google Pixel 4a
  • Google Pixel 3 & 3XL (Limited support)

Huawei

এখন পর্যন্ত যেসকল Huawei ফোনে ই-সিম সুবিধা রয়েছে সেগুলা হলো –

  • Huawei P40
  • Huawei P40 Pro
  • Huawei Mate 40 Pro

Oppo

এখন পর্যন্ত যেসকল Huawei ফোনে ই-সিম সুবিধা রয়েছে সেগুলা হলো –

  • Oppo Find X3 Pro
  • Oppo Reno 5A
  • Oppo Find X5
  • Oppo Find X5 Pro

Motorola

এখন পর্যন্ত Motorola কোম্পানির মাত্র ২ টি e-sim সাপোর্টেড মোবাইল রয়েছে –

  • Motorola Razr 2019
  • Motorola Razr 5G

Sony

বর্তমানে Sony ব্রান্ডের ৩টি মডেলে ই-সিম সাপোর্ট করে। এগুলা হলো –

Sony Xperia 10 III Lite

Sony Xperia 10 IV

Sony Xperia 1 IV

 

Xioami

Xioami বাজারে কেবলমাত্র ১ টি e-sim সাপোর্টেড মোবাইল লন্স করেছে –

  • Xiaomi 12T Pro (Global)

বিঃদ্রঃ 

উপরে যেসব মোবাইলের নাম উল্লেখ করেছি তার মধ্যে  ই-সিম সমর্থনে বার্থ হতে পারে। Official এবং Unofficial মোবাইলের উপর ভিত্তি করে  ই-সিম সমর্থনে ভিন্নতা দেখা  দেয়। আবার এক ই মডেল এর বিভিন্ন দেশের ভার্সন অনুযায়ী এই সিম সমর্থনে ভিন্নতা লক্ষ্য করা যাই। আপনি ফোন কেনার আগে অবশৈই  ফোনে e-sim সাপোর্ট করে কিনা সেটা নিশ্চিত  হয়ে নিবেন। 

 

কিভাবে ই-সিম ব্যবহার করতে হয়-

ই-সিম ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই আপনার একটি ই সিম সমর্থিত স্মার্টফোন থাকতে হবে। আপনি যদি  ই সিম সমর্থিত স্মার্টফোনে এই সিম ব্যাবহার করতে চান তাহলে নিচের ধাপগুলা অনুসরণ করুন –

নতুন ই-সিম অ্যাকটিভ করার নিয়ম:

নতুন ই-সিম কেনার জন্য আপনার পছন্দের অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার বা  শপে যেতে হবে। তারপর নিম্নলিখিত কাজ গুলা করতে হবে –

১) আপনার পছন্দের অপারেটর এর অফারকৃত প্যাকেজ থেকে আপনার পছন্দের প্যাকেজে বেছে নিন। 

২) আপনার পছন্দ অনুযায়ী নম্বর বেছে নিন। 

৩) বায়োমেট্রিক  পদ্ধতিকে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করুন। 

৪) আপনার ফোনে ইন্টারনেট সংযোজ নিশ্চিত করুন। 

৫) সিমের সাথে দেয়া সিম কিটের QR কোডটি স্ক্যান করুন। 

৬) আপনার মোবাইল ফোনের সেটিং অনুযায়ীই  ধাপে ধাপে ই-সিম এক্টিভেশন প্রসেসটি কমপ্লিট করুন।  এই কাজে কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি আপনাকে হেল্প করবে। 

 

ই-সিম এর সুবিধাসমূহ

১) খুব সহজেই আপনি অপারেটর পরিবর্তন করতে পারবেন। 

২) মোবাইল  অপারেটর বা নাম্বার চেঞ্জ করতে চাইলে সিম রিমুভ করার কোন ঝামেলা নেই। 

৩)খুব সহজে এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরে  সুইচ  করা সম্ভব। 

৪) খুবই নিরাপদ একটি টেকনোলজি, কারণ সিম হারানোর সম্ভাবনা নেই। 

৫) ব্যবহার করা সহজ। খুব সহজেই ইন্সটল করা যায়। 

৬)অন্য দেশে গিয়েও আপনি খুব সহজে ই-সিম  ব্যবহার করতে পারবেন। 

৭) বিভিন্ন কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নাম্বার ব্যবহার করতে পারবেন। 

৮) প্লাস্টিক সিমের ব্যবহার কমার কারণে পরিবেশবান্ধব। 

ই-সিম ব্যবহারের অসুবিধাঃ

সবকিছুরই ভালো এবং খারাপ দুটি  দিক থাকে। ই-সিম এর ক্ষেত্রেও অনেক ভালো সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধা রয়েছে।  অসুবিধাগুলা নিচে তুলে ধরা হলো –

১) সিম রিমুভ করা বা প্রতিস্থাপন করার  সুযোগ না থাকার কারণে ডিভাইস পরিবর্তন করতে চাইলে মোবাইল অপারেটর কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার এ যেতে হতে পারে , যা অনেকের কাছে ঝামেলাজনক মনে হতে পারে। 

২) ফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে আপনার ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে সেভ করা কন্টাক্ট নম্বর হারিয়ে যেতে পারে। 

৩)সকল ফোনে এই সিম সাপোর্ট করে না। 

৪) বাজারে ই সিম সমর্থিত স্মার্টফোন গুলোর দাম এখনো তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। 

শেষকথাঃ 

আমাদের সবার কাছে ই সিম সাপোর্ট মোবাইল না থাকার কারণে বা কেনার সামর্থ না থাকার কারণে যদিও বর্তমানে আমার ই-সিম সুবিধা ভোগ করতে পারছি না।  তবে আশা করা যাই খুব দ্রুত বাজারে ই সিম সমর্থিত স্মার্টফোন গুলার সবার নাগালের মধ্যে চলে আসবে। যদিও ই-সিমের সামান্য কিছু অসুবিধা রয়েছে তবে সেটা বড়ো  কোনো সমস্যা না। এর সুবিধার কাছে তা  কিছুই না। আমাদের এই পোস্ট টি আপনার যদি সামান্য কোনো উপকারে আসে তাহলে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ !!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *